Latest in Tanni


More

More

Posted on : Sunday, September 1, 2013 [0] comments Label: ,

কেরালায় সাত দিন

by : Ami Tanni
কোচি বা কোচিন যাই বলুন,  দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের কেরল অঙ্গরাজ্যের এই বন্দর শহর কিন্তু অপরূপ সুন্দর। তবে আমাদের গন্তব্য স্থান ছিল (মানে আমি আর আমার রব ) মুন্নার। এই সাত দিনের ভ্রমণ সূচীতে মুন্নার, ঠেকরি ও আলেপ্পি ছিল। 

কোচি বিমান বন্দর থেকে মুন্নার যেতে প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল। পাহাড়ে উঠতে উঠতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। এখানে নাকি এই বৃষ্টি এই রোদ। আমরাও উপভোগ করলাম সেই দৃশ্য। সে যে কি সুন্দর দৃশ্য! নীল আকাশ আর তার নীচে সবুজ চা বাগান। দেখে মনে হচ্ছিলো যেন গালিচা পাতা। 
পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উপর অবস্থিত কেরেল এর এই সুন্দর শৈলশহরটি। মুন্নারের উপর দিয়ে প্রভাহিত হয়েছে মাদুপেটি,নাল্লাথান্নি, পেরিয়াভারু - এই তিনটি নদী। পাহাড়, চা বাগান, আর হঠাৎ করে পাহারের গা বেয়ে আসা ঝর্না সত্যি দেখবার মতো। তাছার পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পাকদণ্ডি দেখলে গাড়ি একবার থামেতেই হবে। মাঝে মাঝে নাকি বন্য হাতিও বেরিয়ে আসে। আমাদের অবশ্য দেখবার সেই সৌভাগ্য হয় নি।

মুন্নারের চা-বাগানগুলির বেশ আকর্ষনীয় স্থান। এখানের একটা চা এর মিউজিয়ামেও গিয়েছিলাম মিউজিয়ামে প্রবেশের পথে একজন লোক বিভিন্ন ধরনের চা নিয়ে বসেছিলেন। টেস্ট করে দেখার জন্য। আমিও করলাম। ভেতরে ডুকে একটা কাউন্টার চোখে পড়লো। দেখলাম চা পাতা বিক্রি হচ্ছে। একটা মিনিটও দেরী না করে, কিনে নিলাম বেশ কটা। মশালা চা এর স্বাদ এখনও মনে পরে। সেই মশালা চা অবশ্য আমি পরে কোথায় খুঁজে পাইনি। এই চা এর জন্য হয় তো আমাকে আবার যেতে হবে।
যাই হোক এই চা সংগ্রহশালায় প্রচুর কিউরিও, ছবি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে রাখা আছে, যেগুলির প্রতিটিই আমাদেরকে মুন্নারে চা-শিল্প শুরু হওয়া ও বিস্তার লাভ করা সম্পর্কে কিছু না কিছু বলে। চা এর উপর একটা তথ্যচিত্রও দেখানো হয়। আমরা সবটা দেখতে পারিনি। শেষের কিছুক্ষণ দেখছি ভালো লেগেছে্র
মুন্নার শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে স্থিত আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল মাত্তুপেত্তি। শহরটি সংরক্ষণ স্থাপত্যমূলক জলাধার ও সুন্দর ঝিলের জন্য বিখ্যাত, যেখানে আপনি নৌবিহার করতে পারেন এবং এখানকার পারিপার্শ্বিক অঞ্চল ও ভূদৃশ্যের ভরপুর আনন্দ নিতে পারেন।
মুন্নারের চিথিরামপুর থেকে ৩ কিমি দূরত্বে অবস্থিত পল্লিভাসল কেরালার একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এটি অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি স্থান এবং পিকনিক প্রেমিদের এটি খুব পছন্দের একটি জায়গা।
শীতল আবহাওয়া এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যাবলী। কুয়াশার আলিঙ্গনবদ্ধ থাকে প্রায়ই মুন্নার।এছাড়াও ট্রেকিং ও মাউন্টেন বাইকিংয়ের জন্য এটি একটি উপযুক্ত স্থান। আগস্ট থেকে মার্চ এখানে বেড়াতে যাবার আদর্শ সময়। আমরা গিয়েছিলাম আগস্টের শেষের সপ্তাহে। এই সময় গেলে সঙ্গে গরম জামা, ছাতা বা রেনকোট রাখতে ভুলবেন না। আর থাকার জন্য রয়েছে খুব ভালো ভালো হোটেল, রিসোর্ট। 
মুন্নারের পরে যাই ঠেকরি (thekkady)। মুন্নারে আমরা আবাদের রিসোর্ট ছিলাম। ঠেকরিতেও তাই। ঠেকরি রীতি মতো জঙ্গল। মুন্নারে রিসোর্টটি ছিল একদম পাহাড়ের উপরে। আর এখানে শহরের মাঝামাঝি স্থানে। কিন্তু বেশ একটা জঙ্গল জঙ্গল ভাব আনবার জন্য হোটেলের চারিদিকে প্রচুর গাছগাছালি লাগানো হয়েছিলো।
ঠেকরিতে দেখবার মতো হল পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক (Periyar National Park)। এখানে বিভিন্ন রকমের গাছগাছালি রয়েছে। রয়েছে বন্য প্রাণীও। আমরা বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম এই ন্যাশনাল পার্কটিতে। খুব শান্ত নির্জন পরিবেশ।
ঠেকরি সোজা চলে এলাম আলেপ্পি বোট হাউসে (alleppey)। আলেপ্পিকে আবার আলাপুরাও বলা হয়। যাই হোক বোট হাউসে থাকবো এই নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলাম।কেরলের বিখ্যাত ‘ব্যাকওয়াটার’। কত শুনেছি। 

আমি সাঁতার জানি না, শুনে আমার থেকে আমার বরের বেশি ভয় করছিলো। আমি বিন্দাস ছিলাম। আমরা প্রায় ৩০ ঘণ্টার মতো ছিলাম বোট হাউসে। গোটা দিন হ্রদের এক ধার থেকে অন্য ধারে ঘুরেছি।গোটা দিন জলে-জলে! আরব সাগরের সমান্তরালে উপকূল এলাকায় অগুনতি লেক আর তৈরি করেছে সেই ‘ব্যাকওয়াটার’। সেই জলাশয় এক অর্থে বদ্ধ। তাই কোথাও কোথাও জন্ম নিয়েছে কচুরিপানারা। শাপলা আর পদ্মও চোখে পড়েছে। আর আছে নারকেল গাছ। সারি সারি নারকেল গাছ। কোনওটা লম্বা, কোনওটা উচ্চতায় খাটো। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে সবুজ ছায়া ফেলছে জলে। সেই জলেই ধীরে ধীরে দোলে দোলে ভেসে চলেছে আমাদের হাউসবোট। 
হাউসবোট ঠিক যেন সত্যিকারের বাড়ি। বসার ঘর, খাওয়াদাওয়ার জায়গা, শোয়ার ঘর কী নেই তাতে!
সন্ধ্যা নামার আগেই আমাদের হাউসবোট দিয়ে দাঁড়ায় এক টুকরো ডাঙায়। এক দিকে ধু ধু ধানক্ষেত। অন্য দিকে জল। সূর্য ডুবুডুবু হলে তার পিতলরঙা আলো ছড়িয়ে পড়ে জলে। সেই রঙেই বহুক্ষণ মাখামাখি হয়ে থাকে আকাশটা। আঁধার ঘনিয়ে আসে। তবে তার আগেই একটা ছোট দোকান থেকে ভালো ভালো কিছু সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া কিনে নিয়ে এলাম আমরা।
দুপুরের খাওয়াটা জমিয়ে হয়েছিলো রাতেও তাই হল। রাতটা সত্যিই অদ্ভুত ছিল। একটু ভয় করছিলো এই ভেবে অচেনা একটা জায়গা, বোটের চালক, রাঁধুনি, আরেকজন লোক নিয়ে আমরা পাঁচ জন (আমি আর আমার বর)। এদের কে চিনি না যদি কিছু হয়। না রাতটা ভালই কাটলো। সমুদ্রের গর্জন ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিলো না। এক অদ্ভুত মায়াবী রাত। জলের ছলাৎ ছলাৎ শুনতে শুনতে রাতটাও কেটে গেলো। জল ছেড়ে ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও ফিরতে হল।

Newer Posts Older Posts Home
Follow Tanni's board Beauty and Lifestyle of Tanni on Pinterest.