নখের যত্ন নিন বাড়িতেই


সত্যি করে বলুন তো এই প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে আমরা ক'জনে সঠিক অর্থে নখের যত্ন নেই? হাতেগুনা কয়েক জন আছি আমারা যারা নখের প্রতি যত্নশীল। নখ যে শুধু সৌন্দর্য্যকে ফুটিয়ে তোলে তা নয় কিন্তু, নখ দেখে আপনার স্বাস্থ্য কেমন তাও বলা যায়। আপনার শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত নখের যত্ন নেওয়াও কিন্তু জরুরি । অনেক সময় অতিরিক্ত জল বা সাবানের ব্যবহার আমাদের নখ খারাপ করে দেয় এছাড়া বাড়িতে রান্না করার সময় মশলা, তেল ইত্যাদি লেগেও নখ খারাপ হতে পারে । তাই বলে কি কাজকর্ম বন্ধ করে বসে থাকবেন? একদমই না। আপনাকে  বাড়িতেই বের করতে হবে মাত্র পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের মতো সময়। আর প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী। 


১। অনেকেই নখ কাটতে ব্লেড ব্যবহার করে থাকেন, এতে কিন্তু নখের ধার সবসময় সমান করে কাটা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ব্লেড দিয়ে কাটা বিপজ্জনক কারণ এটি একটু ভুলভাবে চললে কাটতে পারে আঙুলও। তাই সামান্য খরচ করে কিনে নেওয়াই যায় একটি  নেল ফাইল করার কিট। এটি বিভিন্ন রেঞ্জের মধ্যে পাওয়া যায়। আমি বলবো একটি ভালো নেল ফাইল করার কিট কেনা মানে কিন্তু ভালো ইনভেস্টমেন্ট। এটি সারা জীবন কাজে আসবে। আজকাল যেহেতু অনলাইন থেকে জিনিস কেনার যুগ তাই এটি সেখানেও পেয়ে যাবেন। আমি এখানে লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি আপনারা একবার দেখে নিতে পারেন।

Stainless Steel Nail Scissors Manicure Grooming Kit Set



২।   যদি নখে পুরোনো নেল পলিশ লাগানো থাকে তাহলে তা  রিমুভার দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। যদি আপনার খুব বড় নখ থাকে, তাহলে কিন্তু নখ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনার নখকে খানিকক্ষণ হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন। এতে নখ খানিক নরম হয়, আর ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে। তারপর নখ শেপ করে নিন। 

৩। নখ বিভিন্ন শেপে কাঁটার প্রচলন আছে। এই যেমন নখ সাধারণত ওভাল, স্কোয়ার, স্টিলেটো, শার্প ইত্যালি রকমের শেপে কাটা হয়ে থাকে। কাটার আগে মাথায় রাখুন যতটা দীর্ঘ নখ রাখবেন ভেবেছেন, নখ তার থেকে একটু বড় রেখে কাটুন। এই অতিরিক্ত অংশটি ফাইল দিয়ে সমান করতে হয়। আপনি কীরকম নখ চান তার উপর নির্ভর করছে ক্লিপার ধরার পদ্ধতি।

৪। নখ শেপ করার পর ফাইলিং করতে কিন্তু ভুলবেন না। এতে নখ আরও সুন্দর লাগে।ফাইলিং এর জন্য কাচের নেল ফাইল বা ধাতুর ফাইলেও  ব্যবহার করতে পারেন। ফাইলিং নখকে সঠিক শেপে আনে এবং নখের সৌন্দর্য ফুটেই তুলতে সাহায্য করে।

এতো গেলো নখ কিভাবে শেপ বা কাটবেন। এতাও নখের যত্নের একটি খুব গুরুত্বপুর্ন দিক।এবার বলবো হাতের নখ কিভাবে পরিষ্কার রাখবেন।

নখ ভিজিয়ে রাখুন

একটি পাত্রে হালকা গরম জল নিন। জলের মধ্যে যেকোনো ফেস ক্লিঞ্জার দিন অথবা ফেস ওয়াশও দিতে পারেন। কারণ সাবান দিলে আপনার হাত কিন্তু বেশী ড্রাই হয়ে যেতে পারে। মিনিট ৩-৫ মতো নখ এতে ডুবিয়ে রাখুন। 

নখের হলদে ভাব দূর করুন

এর জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন লেবু। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি আপনার নখের হলদে ভাব দূর করে এবং প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল  করে তোলে| লেবুর রসের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটু হালকা গরম করে তাতে আপনার নখ ডুবিয়ে রাখুন এবং ২ কি ৩ মিনিটের মতো মাসাজ করে ধুয়ে নিন।

স্ক্রাব করুন

হ্যাঁ নখেরও স্ক্রাব করা যায়।এর জন্য আপনি যে কোন হালকা ফেস স্ক্রাব দিয়ে নখ  এক্সফোলিয়েট করতে পারে। নখকে পরিষ্কার করার জন্য আলাদা ব্রাশ কিনতে পাওয়া যায় তা ব্যবহার করুন। এরপর পরিষ্কার জল ধুয়ে নিন ভালো করে।

কিউটিকলকে পরিষ্কার করে ট্রিম করুন

কিউটিকল কিন্তু আপনার নখকে ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তাই এর যত্নও খুব জরুরি। ভালো কোন বাদাম তেল দিয়ে কিউটিকল মাসাজ করতে পারেন। আবার মাঝে মধ্যে কিউটিকল রিমুভার দিয়ে খানিকক্ষণ ধরে রাখতে পারেন এবং পরে কিউটিকল পুশার দিয়ে কিউটিকলকে পুশ করে নিন।তবে এটা অতিরিক্ত করবেন না। এতে আপনার নখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ময়েশ্চারাইজিং

সব শেষে কোনো একটা ক্রিমি ময়েশ্চারাইজার দিয়ে আপনার  নখগুলিকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এটা আপনার নখকে আর্দ্র রাখবে। আর যদি ময়েশ্চারাইজার না দিতে চান, তাহলে কিন্তু যেকোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন। এই যেমন নারকেল । এটি নখকে ময়্স্চারাইস রাখতে সাহায্য করে এবং এটি নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি তেও সাহায্য করে। এরপর আপনার পছন্দের রঙে নেল পলিশ লাগিয়ে নিন। তবে দেখবেন আপনার নখে যেন কোনো ময়েশ্চারাইজার না থাকে। 
সব শেষে বলবো শুধু মাত্র নখের যত্ন রাইরে থেকে করলেই হবে। আপনাকে ভেতর থেকে যত্ন নিতে হবে। প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের নখে নানা ধরনের সমস্যা হয়| তাই এই দুই ধরনের উপাদান অবশ্যই আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এছাড়া বায়োটিন বা ভিটামিন এইচ আমাদের নখের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই বায়োটিন যুক্ত খাবার যেমন ডিম, শশা, টমেটো, দুধ, আলমন্ড, গাজর, সয়াবিন ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া উচিত । এছাড়া প্রয়োজনে বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্য