রূপচর্চায় কলা অনেক জনপ্রিয় এতে উপস্থিত ভিটামিন এ প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং এতে থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিস ব্রণ এবং মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফলে থাকা এতো এতো ভিটামিন এবং মিনরেল্স যা শরীরকে ফিট রাখার পাশাপাশি ত্বকে নিয়ে আসে প্রাকৃতিক এবং যৌবনদীপ্ত উজ্জ্বলতা। কি কি ভাবে রূপচর্চায় কলা
ত্বকের যত্নে কলা
১। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার (i)
কলা আপনার ত্বকের জন্য একটি দারুণ প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন সমৃদ্ধ কলা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে পারে। এর জন্য একটি পাকা কলা ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে প্রত্যেক দিন স্নানের আগে ২০ থেকে ২৫ মিনিটে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এই প্যাকটি ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করে তুলবে। যদি ত্বক অনেক বেশি ড্রাই থাকে তাহলে কলার সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
২। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার (ii)
আরেকটি সহজ প্যাক যা ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করে তুলতে সাহায্য করে তা হল, একটি অর্ধের পাকা কলা ম্যাশ করে তার সঙ্গে ১ চামচ ঘরে পাতা টক দই ও এক চামচ ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে নিতে হবে। এই প্যাকটি মুখে ৩০ মিনিটে লাগিয়ে রাখতে হবে।
৩। উজ্জ্বল ত্বকের প্যাক (i)
কলার মধ্য রয়েছে ভিটামিন সি , যা ত্বকে প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। একটি অর্ধেক পাকা কলা সঙ্গে ১ চামচ চন্দন গুঁড়া, ১/২ চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে কুসুম গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।
৪। উজ্জ্বল ত্বকের প্যাক (ii)
একটি পাকা কলার সঙ্গে ৩ চামচ লেবু রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের মতো। ভিটামিন C- এর পূর্ণ এই প্যাকটি ত্বককে দাগ দূর করে মুখকে করে তুলবে অনেক উজ্জ্বল।
৫। ত্বকের স্ক্রাবার (i)
কলায় অনেক পরিমাণে anti-oxidants রয়েছে। কলার সঙ্গে আরও কয়েকটি উপাদান মিশিয়ে নিয়ে তৈরি করা যায় দারুণ স্ক্রাবার। যা ত্বক থেকে মৃত চামড়া দূর করতে সাহায্য করে। এর জন্য যা যা লাগবে, এক চামচ চিনি ও অর্ধেক পাকা কলা, ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ৫ মিনিট। ১ থেকে ২ মিনিট সার্কুলার মোশনে মাসাজ করুন এবং কুসুক গরম জলে ধুয়ে নিন।
৬। ত্বকের স্ক্রাবার (ii)
একটি পাকা কলার পেস্টের সঙ্গে ৩ চামচ ওটস, এক চামচ মধু ও ২ চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে লাগয়ে রাখুন ৫ মিনিটের মতো। এরপর ধীরে ধীরে ত্বকে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করুন ও ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। অত্যন্ত শুষ্ক ত্বক হলে দুধের পরিবর্তে দুধের সর ব্যবহার করতে পারেন।
৭। ত্বকের স্ক্রাবার (iii)
অর্ধ পাকা কলা, ১ চামচ নারকেল দুধ, 2 চালের গুঁড়ো নিয়ে একটি পুরু পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন তিন মিনিট। মুখ ধোয়ার আগে এই মিনিট ম্যাসেজ করে নিন।
৮। Anti-ageing প্যাকে
কলায় উপস্থিত ভিটামিন এ এবং ই ত্বক বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ত্বকে বলিরেখার মতো লাইনগুলি কলার নিয়মিত ব্যবহারের ফলে দূর হয়। বয়স ধরে রাখার প্যাক বানানোর জন্য চাই, অর্ধের কলা, ২ চামচ আলভেরার জেল আর ১ চামচ গোলাপ জল। সমস্ত উপাদান মিশিয়ে একটি মিহি প্যাক তৈরি করে নিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিটের মতো। খুব ভালো হয় যদি এই প্যাকটি রাতে লাগানো যায়।
চুলের যত্নে কলা
ত্বকের মতো চুলেও বিভিন্ন ভাবে কলা ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯। নরম চুলের জন্য প্যাক
পাকা কলা সঙ্গে নারকেল দুধ যোগ করুন। আপনার চুল উপর এই প্যাকটি প্রয়োগ করুণ এবং ২০ থেকে ২৫ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। এই প্যাকটি রুক্ষ চুলের মধ্যে ময়েশ্চারাইজার ফিরিয়ে আনে এবং চুলকে করে তুলে নরম। এই প্যাকের সঙ্গে কফি পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন এতে চুলের মধ্যে একটা প্রাকৃতিক ব্রাউন রং আসবে।
১০। সাইন এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্যাক (i)
একটি কলা এবং জলপাই তেল ১/৪ কাপ এবং একটি ডিমের সাদা অংশ এক সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিটের জন্য। শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেওয়ার পরে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
১১। সাইন এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্যাক (ii)
২ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল, ২ চা চামচ নারিকেল তেল, একটি ডিম এবং একটি কলা ভালো মতো মিশিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে লাগান। ২ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক টি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুলকে নরম এবং রেশমি করে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।
১২। উজ্জ্বল এবং ঝলমলে চুলের প্যাক
একটি কলা ভালো মতো পেস্ট করে নিন। এরপর এর সাথে ২ চামচ টক দই মিশিয়ে চুলে লাগান। সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করলে এক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। চুল আগের চেয়ে উজ্জ্বল এবং ঝলমলে হবে।
১৩। নিষ্প্রাণ এবং ফ্রিজি চুলের জন্য প্যাক
১ টি কলা পেস্ট করে এর সাথে ২-৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় এবং স্ক্যাল্পে ভালো মতো লাগান। এরপর মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ বা তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
১৪। ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য প্যাক
আরেকটি সহজ এখনও কার্যকর হেয়ার মাস্ক হল বাদাম তেল ও কলা দিয়ে তৈরি প্যাক। এই প্যাক বানিয়ে ২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন।
১৫। রূপচর্চার পাশাপাশি প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
গবেষণা অনুসারে,কলাতে রয়েছে ট্রিপ্টোফ্যান নামক এক ধরনের প্রোটিন যা মানুষের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব কম পরিমাণে লবন যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এছাড়াও কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। তাই এনিমিয়া বা রক্তশুন্যতা প্রতিরোধে কলা অনেকটা সাহায্য করতে পারে। তাই রূপচর্চার সঙ্গে সঙ্গে একটি কলা ডায়াটে রাখুন।
লেখাটি ভালো লাগলে লাইক ও সেয়ার করুন ।
1 মন্তব্য
ত্বক উজ্জল করতে কে না চায়! আপনার এই সকল দারুন টিপসের জন্য ধন্যবাদ। এরকম আরও খুজে পাওয়া যাবে সোস্যাল বাংলা ডট কমে। যেখানে সকলের জন্য রয়েছে অসাধারণ টিপস। সোস্যাল বাংলা
উত্তর দিনমুছুন