বর্ণবতীকে ছাড়া যেমন বাঙালি রান্নার কথা ভাবতে পারেন না, তেমনিই ভেষজ চিকিৎসকরা চিকিৎসার জন্য এর ব্যবহার করে থাকেন। হ্যাঁ হলুদ, বহুকাল ধরে রান্না এবং বিভিন্ন উপাচার হেতু ব্যবহার হয়ে এসেছে।
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্যের ভাষায় বলতে হয়, ‘অনেক ব্যাধিই অকস্মাৎ বৃহৎ হয়েও দেখা দেয় না, সেসব ক্ষেত্রে কু-চিকিৎসা না হলে এমনি স্বল্পায়ানা চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে যায়।’ তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হলুদ চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রথম সারির ভেষজ।
হলুদে ৩০০ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, এর ফলে এটি আরও শক্তিশালী ভেষজ। হলুদ যেমন আপনার ভেতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে, তেমনি এটি আপনার ত্বকের মধ্যেও উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে। তবে একথাও সত্যি যে ৩০০ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুরু ত্বকে উজ্জ্বল করে না, এর আরও অনেক কাজও রয়েছে।
কাঁচা হলুদ অনেক বেশি কার্যকরী। হলুদের রস সাধারণত সরাসরি বা অন্য কোন তরলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। যেমন দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে ইত্যাদি। আজকের পোস্টতে হলুদ রসের ১৫ টি কার্যকর উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হল
বাতের চিকিৎসা
পিসি ঠাকুমাদের বলতে শুনতাম হলুদ পোড়া ছাই জলে মিশিয়ে রাতে খেলে নাকি বাত সারে। তবে একথা ঠিক যে বাতের চিকিত্সায় হলুদের ব্যবহার হয়। হলুদের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ বাতের ব্যথা সক্রিয় হয়ে উঠে।
অ্যাল্জায়মার ডিজিজ
অ্যাল্জায়মার হল একটি গুরুতর স্নায়বিক ব্যাধি। যার দরুন ব্যাক্তির স্মৃতি শক্তি ধীরে ধীরে লোপ পায়। এই রোগের জটিলতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক। হলুদ রস কার্যকরভাবে এই রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে।
পেটের বায়ু ও পুরাতন ডায়রিয়া
পেটে বাতাস হলে ও পুরনো ডায়রিয়ায় হলুদের গুঁড়ো বা রস জলের সঙ্গে খেলে খুবই উপকার হয়।
পেটের পীড়া
পেটের সংক্রমণ দমনে হলুদ খুবই কার্যকর। মাখন বা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে।
লিভারের দোষ
পাণ্ডু রোগে (জন্ডিস) গায়ের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে বুঝতে পারলে হলুদের রস ৫ থেকে ১০ ফোঁটা থেকে শুরু করে বয়সানুপাতে ১ চা চামচ পর্যন্ত একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা বহু আগে থেকে চলে আসছে। আবার একটু হলুদ গুঁড়া তার দ্বিগুণ পরিমাণ দইয়ে মিশিয়ে খেলে পিলে ও যকৃতের দোষ এবং জন্ডিস সারে। মধুসহ হলুদ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
হজম শক্তি বাড়ায়
হলুদ রস শরীরের বিপাকীয় হার বাড়িয়ে হজম হওয়া ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই বদহজম হলে আপনি নিশ্চিত হলুদ রস সেবন করতে পারেন। এই মসলা গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য মত পাচক রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
কফ, সর্দি ও ঠাণ্ডা লাগা
দুধে হলুদকে সিদ্ধ করে বেটে চিনি মিশিয়ে খেলে সর্দি সারে। পুরনো কফ রোগ, গলা ফোলা ও গলা জ্বালায় আধা চা-চামচ হলুদের গুঁড়ো ৩০ মি.লি. গরম দুধে মিশিয়ে খেলে খুবই উপকার হয়। এতে বড় চামচে দুধ ঢেলে তাতে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে অল্প আঁচে উৎরিয়ে নিতে হয়।
কাশি
খুব বেশি কাশির ঝোঁক হলে এক কাপ ঈষৎ উষ্ণ জলে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করলে কাশির উপশম হয়।
মানসিক অবসাদ তাড়াতে
সাইটোফেরাপি রিসার্চের একটি প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে, হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামক একটি সক্রিয়া উপাদান বর্তমান যা মানসিক অবসাদ দূর করতে সক্ষমে। কারকুইমিন মোনোয়ামাইন অক্সিডেস নামক এনজাইম উৎপাদনের বাধা সৃষ্টি করে৷ এই এনজাইমই সরাসরি অবসাদের সঙ্গে যুক্ত৷ হলুদে অবস্থিত এই প্রদাহ বিরোধী উপাদান যে কোন মানুষের জন্যই একটি ভাল সম্পূরক৷
অম্লতা দূর করে
পেটের মধ্যে pH এর মাত্রা ঘটতির দরুন আমাদের অম্লতার সমস্যা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত অম্লতার জন্য আলসারও হতে পারে। হলুদ রসের শীতলতা এবং এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ পেটের স্বাভাবিক pH এর মাত্রাকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। অম্লতা এবং গ্যাসের বিরুদ্ধে একটি বিপ্লবী স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে হলুদ রসকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
হার্টের জন্য ভালো
হলুদ রস শরীরের cholesterol এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। অধিক মাত্রায় cholesterol এর ফলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই cholesterol নিয়ন্ত্রনের অর্থ মানব হৃদয় স্ট্রোক থেকে নিরাপদ। এছাড়াও হলুদ রস ধমনির প্লেক বিল্ড আপ নিয়ন্ত্রণ করে যা হৃদয় এলাকা clots এর গঠনকে ব্যাহত করে।
ফোঁড়া
পোড়া হলুদের ছাই পানিতে গুলে সেটা লাগালে ফোঁড়া পাকে ও ফেটে যায়; আবার গুঁড়ো লাগালে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
চর্মরোগ
দাদ ও খোস পাঁচড়ায় হলুদের রস চামড়ায় লাগালে তা মধু মিশিয়ে খেলে রোগ সারে। এ ছাড়া হলুদ পিষে তিলের তেল মিশিয়ে গায়ে মাখলে চর্মরোগ সারে।
এছাড়াও রূপটানে তো হাজারো রকম ভাবে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। মেয়েদের কাছে ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষায় হলুদ সমাদৃত। রোদে পোড়া দাগ, বয়সের বলিরেখা, ত্বকের ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের তুলনা হয় না।
এছাড়াও রূপটানে তো হাজারো রকম ভাবে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। মেয়েদের কাছে ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষায় হলুদ সমাদৃত। রোদে পোড়া দাগ, বয়সের বলিরেখা, ত্বকের ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের তুলনা হয় না।
take care
Facebook এর আমাদের সঙ্গে থাকুন।