একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন আমরা যখন কোন অসুস্থ কাউকে দেখতে যাই তখন কিছু ফল নিয়ে যাই। আর তার মধ্যে আপেল বা বেদানা যে কোন একটা থাকবেই। বিশেষ করে বেদানার কথাই বলবো। অসুস্থ হলেই ব্যস! শুধু বেদানাই খাও। কিন্তু এর পেছনের অর্থটা যে অন্য। আসলে বেদানায় এতো রকমের গুণাগুণ রয়েছে যে অসুস্থ মানুষকে চাঙা করে তোলে। বেদানায় রয়েছে প্রচুর খনিজ। তাই যাদের রক্তশূন্যতা আছে, তাদের জন্য খুব ভালো।এ ছাড়া আছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ ভিটামিন এ, সি, ই প্রভৃতি পুষ্টি উপাদান। এ ছাড়া চোখের নিচে পড়া বয়সের ছাপ দূর করতে পারে এই ফল। বেদানায় রয়েছে পটাশিয়াম ও পলিফেনল, যা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলের কার্টিলেজের জন্য খুব উপকারী। তাই নিয়মিত বেদানা খেলে হাড়ের নানাবিধ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দাঁতের যত্নে বেদানায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। এছাড়া মাড়ির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও বেদানার ভূমিকা অপরিসীম।
আমার তো মনে হয় প্রতিটি সুস্থ মানুষকে রোজ ১টি বা সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন বেদানা খাওয়া উচিৎ। একবার এক ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম যে এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে কাজের চাপে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিংবা কাজ দেখলেই বিরক্তি লাগছে এমনটি মনে হলে তারা যদি নিয়মিত বেদানার রস খান তাহলে কাজকে আর চাপ বা বিরক্তিকর বলে মনে হবে না এবং দেহের শ্রান্তি দূর হবে এবং সহজেই চাঙ্গা ভাব তৈরি হবে।
আমি আমার ঘরে মাসে দুই থেকে তিন কিলো বেদানা আনি। কারন আমি জানি বাইরে থেকে যতই রূপচর্চা করি না কেন ভেতর যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে কোনটাই কাজে আসবে না। আর বেদানা যেহেতু ত্বকের উজ্জলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে তাই আমি বেদানা খাওয়াটা বেশি প্রেফার করি।
বাজারে বেদানা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রডাক্ট পাওয়া যায়। এই যেমন ধরুন পোমেগ্র্যানেট অয়েল, ময়শ্চারাইজার, স্ক্রাবার, ইত্যাদি। সবেরই নিজেস্ব গুন , ব্যবহার পদ্ধতি রয়েছে। তবে আমি ঘরে তৈরি পোমেগ্র্যানেট স্ক্রাবারই খুব পছন্দ করি। অর্থাৎ আমার নিজের তৈরি বেদানার স্ক্রাবার।
বেদানার বীজ দিয়ে তৈরি এই স্ক্রাবার ত্বক তো উজ্জ্বল করেই সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের কালো দাগ দূর করে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমি এই স্ক্রাবার শুধু ত্বকে নয় গোলাপি আভা ফিরিয়ে আনার জন্য ঠোঁটেও লাগাই। চলুন তাহলে দেখে নেই কি করে ঘরেই তৈরি করা যেতে পারে বেদানার স্ক্রাবার।
কি কি লাগবে -
বেদানার স্ক্রাবার তৈরি করতে যা যা লাগবে তা হল, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, অলিভ তেল (বা নারকেল তেল), মধু, গোলাপ জল, বেদানার বীজ, এবং একটি কাঁচের পাত্র।
পদ্ধতি -
দুই চামচ বেদানার দানা নিন। খুব ভালো হয় যদি বেদানার বীজ নেওয়া যায়। যেহেতু আমি আগেই বলেছি যে আমার ঘরে আমি নিয়মিত বেদানা আনি তাই আমি সব সময়ই বেদানার জুস করলে তার বীজগুলি সংগ্রহ করে রাখি। আপনারাও তাই করতে পারেন। নয়তো স্ক্রাবার বানানোর সময় খুব ভালো করে বীজগুলি পেস্ট করে নিন।
বেদানার দানা নেওয়ার পর এক চা চামচ পরিমাণ কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, অলিভ তেল, মধু, ও গোলাপ জল একটি কাঁচের পাত্রে নিয়ে নিন। এখানে একটা কথা বলার আছে, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো আমার ফ্রিজে সব সময়ই রাখা থাকে। আসলে শীতকালেই আমি কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো বানিয়ে রাখি। এই খোসার গুঁড়ো আমি সারা বছরের রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করি। যাই হোক, সমস্ত উপাদান কাঁচের পাত্রে নেওয়ার পর এবার চামচ দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। চেষ্টা করবেন যেন বেদানার বীজগুলি একেবারে পেস্টের মতো হয়।পরিমাণ যদি একটু বেশি নিয়ে থাকেন তাহলে মিক্সিতেও পেস্ট তৈরি করতে পারবেন। এই স্ক্রাবার ১০ থেকে ১২ দিন ফ্রিজে রাখেও ব্যবহার করা যাবে।
প্রয়োগ পদ্ধতি -
চোখের অংশটুকু ছাড়া সারা মুখে (আমি ঠোঁটেও লাগাই) লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ২৫ মিনিট। মুখ ধোয়ার আগে সার্কুলার মোশনে ২ থকে ৩ মিনিট মাসাজ করুন। তারপর সাধারন জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এই স্ক্রাবার ব্যবহারের পর কোন ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার লাগানোর প্রয়োজন নেই। বেদানা স্ক্রাবার এর ব্যবহার ত্বককে করে তোলে নরম ও উজ্জ্বল। এটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করা যাবে।
সব ধরনের ত্বকে এই স্ক্রাবার ব্যবহার করা যাবে, তবে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে অলিভ তেল ৩ থেকে ৪ ফোঁটা ব্যবহার করুন।
যদি আপনারা এই স্ক্রাবারটি বাড়িতে বানিয়ে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন তাহলে অবশ্যই জানাবেন আপনার ত্বকে এর রেজাল্ট কি।
take care
টিপসটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন !