শীতের মৌসুমে ফলের বাজারে সব থেকে সহজ লভ্য ফল এখন কমলা লেবু। কমলা লেবু খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই ফলের গুনাগুণও অনেক। দ্য নিউ হোল ফুডস এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী, একটি মাঝারি আকৃতির কমলায় রয়েছে প্রায় ৬০টি ফ্লেভোনয়েডস ও ১৭০টি বিভিন্ন ধরনের ফাইটোনিউট্রিএন্টস যা মানুষের ত্বক ও দেহের শরীরের যত্নে কাজে লাগে। এবার আসি কমলা লেবুর খোসাতে। আপাত দৃষ্টিতে এর কোনো গুণাগুণ আমরা খুঁজে পাই না। ফলের একটি অপ্রয়োজনীয় বস্তু ভেবেই সাধারণত আমরা এর খোসা ফেলে দেই। কিন্তু অনেকেই জানি না যে এই কমলার খোসার রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুন ও ব্যবহার। অন্যান্য অনেক ফলের খোসার চেয়ে কমলার খোসার গুনাগুন অনেক বেশি। এমনকি দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজেও কমলার খোসা ব্যবহার করা যায়। অথচ আমরা না জেনেই এত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কমলার খোসা অপচয় করি। আসুন জেনে নেই দৈনন্দিন জীবনে কমলার খোসার দারুন সব ব্যবহার।
১.ত্বকের যত্নে কমলার খোসা
কমলার খোসা ত্বকের তেলের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং ত্বককে মসৃণ, নরম করে তোলে। তবে কমলার খোসা সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ না করাই ভাল । ত্বকের জন্য আপনাকে তাজা কমলার খোসার সাথে যোগ করতে হবে ডাল বাটা। মুসুরের ডাল বেটে নিয়ে এতে কমলার খোসা বাটা ভালো করে মিশিয়ে নিয়মিত ত্বকে প্রয়োগ করলে ত্বক মসৃণ ও নরম হবে। এতে করে মুখের দাগও দূর হবে।
২. ব্রনের সমস্যা দূর করতে কমলার খোসা
কমলার খোসাতে রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা ব্রণের বিরুদ্ধে কাজ করে মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করে। একটি গোটা কমলার খোসা ১ কাপ জলে সিদ্ধ করে নিন। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করলে সহজেই ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
৩. রান্নার কাজে কমলার খোসা
কমলালেবুর খোসা রান্নায় ব্যবহার করলে রান্নার স্বাদ ও গন্ধের পাশাপাশি এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে। বাড়তি কোনো রাসায়নিক ফ্লেভার যোগ না করে কেক,বিস্কিট ইত্যাদি তৈরির সময় ব্যবহার করতে পারেন কমলার খোসার মিহি কুচি। সালাদ তৈরিতেও প্রয়োগ করলে যোগ হবে অসাধারণ স্বাদের একটি ভিন্ন মাত্রা। এছাড়া জ্যাম জেলি তৈরি সময় কিংবা মারমালেড তৈরিতেও ব্যবহার করা যায় সহজেই।
৪. স্ক্রাবার হিসেবে কমলার খোসা
শুকনো কমলার খোসা প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। কমলার খোসা ত্বকের উপরিভাগের মৃতকোষ দূর করে চেহারায় উজ্জলতা ফিরিয়ে আনে। এছাড়া ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস অপসারণের কাজেও কমলার খোসা চমৎকার একটি উপাদান। কমলার খোসা শুকিয়ে গেলে একে গুঁড়ো করে নিয়ে মধু মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে নিন। এরপর একে সাধারণ স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে করুন।
৫.কমলা ও চিনির যুগলবন্দী
চিনিতে কমলার গন্ধ ও স্বাদ আনতে চাইলে কিছু তাজা কমলার খোসা চিনির এয়ার টাইট বয়ামে রেখে দিন। এতে করে চিনিতে কমলার গন্ধ ও স্বাদ আসবে। এই চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাদ্য ও পানীয় ক্ষুধার উদ্রেক করে, রুচি বাড়ায় ও ক্ষুধা মন্দা ভাব দূর করে। এছাড়াও কোনো কারনে চিনি ভিজে গেলে তাতে কিছু শুকনো কমলালেবুর খোসা রেখে দিন। শুকনো কমলার খোসায় রয়েছে আদ্রর্তা শোষণ করার ক্ষমতা। এটি সহজেই চিনির আদ্রর্তা শোষণ করে চিনিকে করে তুলবে ঝরঝরে।
৬. এয়ার ফ্রেশনার হিসেবে কমলার খোসার ব্যবহার
ঘরের স্যাঁতসেঁতে ভাব ও স্যাঁতসেঁতে গন্ধ দূর করার কাজেও ব্যবহার করতে পারেন কমলালেবুর খোসা। সামান্য জলে দারুচিনির সাথে কমলার খোসা দিয়ে ৫/৬ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এই মিশ্রণের অতুলনীয় সুবাস আপনার ঘরের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ দূর করে মিষ্টি সুবাসে ভরিয়ে দেবে।
৭. দাঁত সাদা করতে কমলার খোসা
সবচাইতে ভালো ও প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে পারেন কমলার খোসা দিয়ে। শুধু কমলার খোসার ভেতরের দিকে একটু পানি ছিটিয়ে দিয়ে দাঁত ঘষে নিন। দাঁতের হলদে ভাব দূর হবে নিমিষেই। আপনি চাইলে কমলার তাজা খোসা বেটে নিয়ে পেস্টের মতো ব্যবহার করতে পারেন।
৮. খুসকি দূর করতে ব্যবহার করুন
কমলা লেবুর খোসা সারা রাত গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই জল চুলের গোঁড়ায় ১ ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর স্বাভাবিক জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এই প্রক্রিয়া এক দিন অন্তর অন্তর করুন। খুসকি চলে যাবে।
৯. মেদ ঝরাতে সাহায্য করে
শরীরের বারতি মেদ ঝরাতে কমলার খোসার জুরি নেই। তাই আপনার ডায়াটে রাখতে পারেন কমলার খোসা।
লিস্ট এর নেই কিন্তু জুড়ে দিচ্ছি খোসার আরেকটি ব্যবহার। খোসাকে নীচের দেওয়া ছবির মতো প্রদীপ বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন যে কোন অনুষ্ঠানে। এতে একটা সুভাস সমস্ত ঘরে ছড়িয়ে পরবে।
এর পরে যখনই কমলালেবু খাবেন সাথে সাথে এর খোসা সংরক্ষণ করে রাখুন। যাতে এটি আপনি আপনার পরিবারের সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সৌন্দর্য রক্ষা ও রান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারেন।